সম্প্রতি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানাধীন লতাবর এলাকায় মাদকের তথ্য ফাঁস করাকে কেন্দ্র করে এক নিরীহ যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংসভাবে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত চারজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।
গত ২৫/০৭/২০২৩ তারিখ লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন লতাবর এলাকায় কতিপয় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী তাদের মাদক ব্যবসার তথ্য ফাঁসের অভিযোগ এনে সুমন নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংসভাবে নির্যাতিত করে এবং নির্যাতনের এসব ভিডিও তাদের মুঠোফোনের মাধ্যমে ধারণপূর্বক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ৩০/০৭/২০২৩ তারিখ নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় উক্ত ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপকভাবে আলোচিত হলে দেশব্যপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তৎক্ষণাৎ উক্ত দুর্ধর্ষ ও নির্মম নির্যাতনের সাথে জড়িত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ০২/০৮/২০২৩ তারিখ গভীর রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা হতে উক্ত নৃশংস নির্যাতনের সাথে সরাসরি জড়িত শহীদুল ইসলাম মিলন (৩৫), পিতা-মৃত জমশের আলী, সাং-লতাবর, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-লালমনিরহাট, মিজানুর রহমান ওরফে মিষ্টার (৩৭), পিতা-মৃত সবুর, সাং-মেডিক্যাল পূর্ব গেইট, ধাপ চিগলি, থানা-কোতয়ালী, জেলা-রংপুর, রবিউল হাসান (২৭), পিতা-নাজির হোসেন, সাং-বড় রুপাই, থানা-গংগা চওড়া, জেলা-রংপুর এবং মোঃ লিমন মিয়া (২২), পিতা-ইন্তাজ আলী, সাং-লতাবর, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-লালমনিরহাট’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকিটিম সুমন মিয়া একই এলাকার জমসের আলীর ছেলে মিলন মিয়া ও এন্তাজ আলীর ছেলে লিমন মিয়ার সঙ্গে ভারতীয় চোরাচালানসহ মাদক ব্যবসা করতেন। বেশ কিছুদিন ধরে এ ব্যবসা নিয়ে সুমন মিয়ার সঙ্গে মিলন মিয়া ও লিমন মিয়ার বিরোধ চলছে। এর জেরে গত ২৫ জুলাই রাতে সুমন মিয়াকে আটক করে ধৃত আসামিরা প্রথমে কিল ঘুসি ও পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। একপর্যায়ে তাকে উলঙ্গ করে গোপনাঙ্গে রশি দিয়ে দুই কেজি ওজনের পানির বোতল বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। লতাবর এলাকায় সুমন মিয়া, মিলন মিয়া ও লিমন মিয়া ভারতীয় চোরাচালানসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি মাদক ব্যবসা নিয়ে সুমন মিয়া তাদের মাদক ব্যবসার তথ্য ফাঁস করলে ভিকটিম সুমন মিয়ার সঙ্গে মিলন ও লিমন মিয়ার বিরোধ বাধে। সেই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র নির্যাতনকারীরা মোবাইলে ধারণ করে রাখে। পরে সেই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিকটিম লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনা প্রথমে গোপন রাখলেও পরে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নির্যাতনের শিকার যুবক কালীগঞ্জ থানায় পর্ণোগ্রাফি আইনে একটি মামলা দায়ের করে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।